জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

Print Friendly and PDF

এনপিএফ ডেস্কঃ
বাংলাদেশে শিশুতোষ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৩’ শুরু হচ্ছে ১৯ জানুয়ারি। চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।


প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবটি আয়োজন করছে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন’।

উৎসবের ছবিগুলো দেখা যাবে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘর, ব্রিটিশ কাউন্সিল, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, গোথে ইন্সস্টিটিউট, ইউসেপ মিলনায়তন, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায়।

রাজধানী ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, খুলনায় একযোগে ছবিগুলো দেখা যাবে। ছবিগুলো প্রদর্শনের সম্ভাব্য সময় সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টা।

উৎসবে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে কেউ বিনামূল্যে ছবিগুলো উপভোগ করতে পারবে। তবে খোঁজ-খবর রেখো কারণ তোমার স্কুল থেকেও দল বেঁধে সবাইকে ছবিগুলো দেখাতে নিয়ে যেতে পারেন শিক্ষকরা। তবে অভিভাবকরাও টিকিট সংগ্রহ করেও ছবি দেখতে পারবেন। উৎসবে ছবি প্রদর্শন করা ছাড়াও থাকছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক কর্মশালা।

উৎসবে গিয়ে ছবিগুলো দেখার সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করো না। কারণ ছবিগুলোর ডিভিডি কিনে বাসায় দেখা গেলেও এই উৎসব ছাড়া বড় পর্দায় ছবিগুলো দেখার সুযোগ পাবে না। আর বড় পর্দায় ছবি দেখার মজাই আলাদা।

সূত্রঃ ইচ্ছেঘুড়ি

সুকুমার রায়ের 'ডিকেকটিভ'

Print Friendly and PDF
Nabo Prottoyজলধরের মামা পুলিশের চাকরি করেন, আর তার পিশেমশাই লেখেন ডিটেক্‌‌টিভ উপন্যাস। সেইজন্য জলধরের বিশ্বাস যে, চোর-ডাকাত জাল-জুয়াচোর জব্দ করবার সব রকম সঙ্কেত সে যেমন জানে এমনি তার মামা আর পিশেমশাই ছাড়া কেউ জানে না। কারও বাড়িতে চুরি-টুরি হলে জলধর সকলের আগে সেখানে হাজির হয়। আর, কে চুরি করল, কি করে চুরি হল, সে থাকলে এমন অবস্থায় কি করত, এ-সব বিষয়ে খুব বিজ্ঞের মত কথা বলতে থাকে। যোগেশবাবুর বাড়িতে যখন বাসন চুরি হল, তখন জলধর তাদের বললে, "আপনার একটু সবধান হতে জানেন না, চুরি তো হবেই। দেখুন তো ভাঁড়ার ঘরের পাশেই অন্ধকার গলি। তার উপর জানালার গরাদ নেই। একটু সেয়ানা লোক হলে এখান দিয়ে বাসন নিয়ে পালাতে কতক্ষণ? আমাদের বাড়িতে ওসব হবার জো নেই। আমি রামদিনকে ব'লে রেখেছি, জানলার গায়ে এমনভাবে বাসনগুলো ঠেকিয়ে রাখবে যে জানালা খুলতে গেলেই বাসনপত্র সব ঝন্‌‌ঝন্‌‌ করে মাটিতে পড়বে। চোর জব্দ করতে ও-সব কায়দা জানতে হয়।" সে সময়ে আমরা সকলেই জলধরের বুদ্ধির খুব প্রশংসা করেছিলাম, কিন্তু পরের দিন যখন শুনলাম সেই রাত্রে জলধরের বাড়িতে মস্ত চুরি হয়ে গেছে, তখন মনে হল, আগের দিন অতটা প্রশংসা করা উচিত হয়নি। জলধর কিন্তু তাতেও কিছুমাত্র দমেনি। বলল, "ঐ আহাম্মক রামদিনটার বোকামিতে সব মাটি হয়ে গেল। যাক্‌‌, আমার জিনিস চুরি করে তাকে আর হজম করতে হবে না। দিন দুচার যেতে দাও না।"

দু মাস গেল, চার মাস গেল, চোর কিন্তু ধরাই পড়ল না। চোরের উপদ্রবের কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি, এমন সময় হঠাৎ‌ আমাদের ইস্কুলে আবার চুরির হাঙ্গামা শুরু হল। ছেলেরা অনেকে টিফিন নিয়ে আসে, তা থেকে খাবার চুরি যেতে লাগল। প্রথম দিন রামপদর খাবার চুরি যায়। সে বেঞ্চির উপর খানিকটা রাবড়ি আর লুচি রেখে হাত ধুয়ে আসতে গেছে— এর মধ্যে কে এসে লুচিটুচি বেমালুম খেয়ে গিয়েছে। তারপর ক্রমে ক্রমে আরো দু-চারটি ছেলের খাবার চুরি হল। তখন আমরা জলধরকে বললাম, "কি হে ডিটেক্‌‌টিভ! এই বেলা যে তোমার চোর-ধরা বুদ্ধি খোলে না, তার মানেটা কি বল দেখি?" জলধার বলল, "আমি কি আর বুদ্ধি খাটাচ্ছি না? সবুর কর না।" তখন সে খুব সাবধানে আমাদের কানে কানে এ কথা জানিয়ে দিল যে, ইস্কুলের যে নতুন ছোকরা বেয়ারা এসেছে তাকেই সে চোর বলে সন্দেহ করে। কারণ, সে আসবার পর থেকে চুরি আরম্ভ হয়েছে। আমরা সবাই সেদিন থেকে তার উপর চোখ রাখতে শুরু করলাম। কিন্তু দুদিন না যেতেই আবার চুরি ! পাগলা দাশু বেচারা বাড়ি থেকে মাংসের চপ এনে টিফিন ঘরের বেঞ্চের তলায় লুকিয়ে রেখেছিল, কে এসে তার আধখানা খেয়ে বাকিটুকু ধুলোয় ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। পাগলা তখন রাগের চোটে চীৎ‌কার করে গাল দিয়ে ইস্কুল বাড়ি মাথায় করে তুলল। আমরা সবাই বললাম, "আরে চুপ্‌‌ চুপ্‌‌, অত চেঁচাসনে। তা হলে চোর ধরা পড়বে কি করে?" কিন্তু পাগলা কি সে-কথা শোনে? তখন তাকে জলধর বুঝিয়ে বলল, "আর দুদিন সবুর কর, ঐ নতুন ছোকরাটাকে আমি হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি— এ সমস্ত ওর‌‌ই কারসাজি।" শুনে দাশু বলল, "তোমার যেমন বুদ্ধি ! ওরা হল পশ্চিমা ব্রাহ্মণ, ওরা আবার মাংস খায় নাকি? দারোয়ানজীকে জিগ্‌‌গেস কর তো?" সত্যি‌‌ই আমাদের তো সে খেয়াল হয়নি ! ছোকরা তো কতদিন রুটি পাকিয়ে খায়, ক‌‌ই একদিনও তো ওকে মাছ-মাংস খেতে দেখি না। দাশু পাগলা হোক আর যাই হোক, তার কথাটা সবাইকে মানতে হল। জলধার কিন্তু অপ্রস্তুত হবার ছেলেই নয়। সে এক গাল হেসে বলল, আমি ইচ্ছে করে তোদের ভুল বুঝিয়েছিলাম। আরে, চোরকে না ধরা পর্যন্ত কি কিছু বলতে আছে, কোনো পাকা ডিটেক্‌‌টিভ ও-রকম করে না। আমি মনে মনে যাকে চোর বলে ধরেছি, সে আমি‌‌ই জানি।"

তারপর কদিন আমরা খুব হুঁশিয়ার ছিলাম, আট-দশদিন আর চুরি হয়নি। তখন জলধর বললে, "তোমরা গোলমাল করেই তো সব মাটি করলে। চোরটা টের পেয়ে গেল যে আমি তার পেছনে লেগেছি। আর কি সে চুরি করতে সাহস পায়? তবু ভাগ্যিস তোমাদের কাছে আসল নামটা ফাঁস করিনি।" কিন্তু সেই দিন‌‌ই আবার শোনা গেল, স্বয়ং হেডমাস্টার মশাইয়ের ঘর থেকে তার টিফিন খাবার চুরি হয়ে গেছে। আমরা বললাম, "ক‌‌ই হে? চোর না তোমার ভয়ে চুরি করতে পারছিল না? তার ভয় ঘুচে গেল দেখছি।"

তারপর দুদিন ধরে জলধরের মুখে আর হাসি দেখা গেল না। চোরের ভাবনা ভেবে ভেবে তার পড়াশুনা এম্নি ঘুলিয়ে গেল যে পণ্ডিত মহাশয়ের ক্লাশে সে আরেকটু হলেই মার খেত আর কি ! দুদিন পর সে আমাদের সকলকে ডেকে একত্র করল, আর বলল, তার চোর ধরবার বন্দোবস্ত ঠিক হয়েছে। টিফিনের সময় সে একটা ঠোঙায় করে সরভাজা, লুচি আর আলুর দম রেখে চলে আসবে। তারপর কেউ যেন সেদিকে না যায়। ইস্কুলের বাইরে থেকে লুকিয়ে টিফিনের ঘরটা দেখা যায়। আমরা কয়েকজন বাড়ি যাবার ভান করে সেখানে থাকব। আর কয়েকজন থাকবে উঠোনের পশ্চিম কোণের ছোট ঘরটাতে। সুতরাং, চোর যেদিক থেকেই আসুক, টিফিন ঘরে ঢুকতে গেলেই তাকে দেখা যাবে।

সেদিন টিফিনের ছুটি পর্যন্ত কারও আর পড়ায় মন বসে না। সবাই ভাবছে কতক্ষণে ছুটি হবে, আর চোর কতক্ষণে ধরা পড়বে। চোর ধরা পড়লে তাকে নিয়ে কি করা যাবে, সে বিষয়েও কথাবার্তা হতে লাগল। মাস্টারমশাই বিরক্ত হয়ে ধমকাতে লাগলেন, পরেশ আর বিশ্বনাথকে বেঞ্চির উপর দাঁড়াতে হল- কিন্তু সময়টা যেন কাটতেই চায় না। টিফিনের ছুটি হতেই জলধর তার খাবারের ঠোঙাটা টিফিন-ঘরে রেখে এলো। জলধর, আমি আর দশ-বারোজন উঠোনের কোণের ঘরটাতে র‌‌ইলাম, আর একদল ছেলে বাইরে জিমনাস্টিকের ঘরে লুকিয়ে থাকল। জলধর বলল, "দেখ চোরটা যে রকম সেয়ানা দেখছি, আর তার যে রকম সাহস, তাকে মারধর করা ঠিক হবে না। লোকটা নিশ্চয় খুব ষণ্ডা হবে। আমি বলি, সে যদি এদিকে আসে তাহলে সবাই মিলে তার গায়ে কালি ছিটিয়ে দেব আর চেঁচিয়ে উঠব। তাহলে দারোয়ান-টারোয়ান সব ছুটে আসবে। আর, লোকটা পালাতে গেলেও ঐ কালির চিহ্ন দেখে ঠিক ধরা যাবে।" আমাদের রামপদ ব'লে উঠল, "কেন? সে যে খুব ষণ্ডা হবে তার মানে কি? সে কিছু রাক্ষসের মতো খায় বলে তো মনে হয় না। যা চুরি করে নিচ্ছে সে তো কোনোদিন‌‌ই খুব বেশি নয়।" জলধর বলল, "তুমিও যেমন পণ্ডিত। রাক্ষসের মতো খানিকটা খেলেই বুঝি ষণ্ডা হয়? তাহলে তো আমাদের শ্যামাদাসকেই সকলের চেয়ে ষণ্ডা বলতে হয়। সেদিন ঘোষেদের নেমন্তন্নে ওর খাওয়া দেখেছিলে তো ! বাপু হে, আমি যা বলেছি তার উপর ফোড়ন দিতে যেও না। আর তোমার যদি নেহাৎ‌ বেশি সাহস থাকে, তুমি গিয়ে চোরের সঙ্গে লড়াই কর। আমরা কেউ তাতে আপত্তি করব না। আমি জানি, এ-সমস্ত নেহাৎ‌ যেমন-তেমন চোরের সাধ্য নয়। আমর খুব বিশ্বাস, যে লোকটা আমাদের বাড়িতে চুরি করেছিল— এ-সব তার‌‌ই কাণ্ড!"

এমন সময় হঠাৎ‌ টিফিন-ঘরের বাঁ দিকের জানলাটা খানিকটা ফাঁক হয়ে গেল, যেন কেউ ভিতর থেকে ঠেলছে। তার পরেই শাদা মতন কি একটা ঝুপ করে উঠোনের মধ্যে লাফিয়ে পড়ল। আমরা চেয়ে দেখলাম, একটা মোটা হুলো বেড়াল— তার মুখে জলধরের সরভাজা ! তখন যদি জলধরের মুখখানা দেখতে, সে এক বিঘৎ‌ উঁচু হাঁ করে উঠোনের দিকে তাকিয়ে র‌‌ইল। আমরা জিগ্‌‌গেস করলাম, "কেমন হে ডিটেক্‌‌টিভ ! ঐ ষণ্ডা চোরটাই তো তোমার বাড়িতে চুরি করেছিল? তাহলে এখন ওকেই পুলিশে দি‌‌ই?"

খ্যাতিমান উদ্যোক্তা ক্যামেরন হ্যারল্ডের বড় হওয়ার অনুভূতি

Print Friendly and PDF
খ্যাতিমান উদ্যোক্তা ক্যামেরন হ্যারল্ডের জন্ম কানাডায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন দেশে নতুন উদ্যোক্তাদের তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ২০১০ সালের মার্চ মাসে কানাডার এডমন্টনে টিইডির একটি অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তব্য দেন।

ক্যামেরন হ্যারল্ড
''এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে আমি সবচেয়ে মাথামোটা! কারণ, আমি ভালোভাবে স্কুলই পাস করতে পারিনি। কিন্তু ছোটবেলাতেই বুঝতে পেরেছিলাম, আমি ব্যবসা বেশ ভালো বুঝি আর বড় হয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে চাই।
ছোটবেলায় আমাদের অজস্র স্বপ্ন থাকে, শখ থাকে, জীবনে অনেক কিছু করার প্রবল ইচ্ছে থাকে। আর যখন আমরা বড় হয়ে যাই, আস্তে আস্তে সেসব স্বপ্ন বিবর্ণ হতে হতে মিলিয়ে যায়। আমাদের শুধু বলা হয়, পড়াশোনা করতে হবে, আরও অনেক পড়তে হবে প্রতিদিন, আরও মনোযোগী হতে হবে, আরও একজন শিক্ষকের কাছ প্রাইভেট পড়তে হবে! আমার মা-বাবা একজন শিক্ষক রেখেছিল আমাকে বাসায় এসে ফরাসি পড়ানোর জন্য; কিন্তু কোনো লাভই হয়নি। দুই বছর আগে এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) ব্যবসায় উদ্যোগ-বিষয়ক মাস্টার্স প্রোগ্রামে আমি সেরা প্রভাষক নির্বাচিত হই। সেখানে আমাকে সারা পৃথিবী থেকে আসা উদ্যোক্তাদের সামনে বক্তব্য দিতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি, তখনই শহরের একটা বক্তব্য প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পাই। কিন্তু তখন কেউ আমাকে এতটুকু উৎসাহ দিয়ে বলেনি, ‘এই ছেলে তো দারুণ কথা বলতে পারে! হয়তো পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী নয়, কিন্তু ও মানুষকে চমৎকারভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।’ কেউ একবারও আমার মা-বাবাকে বলেনি, ‘ওকে বক্তৃতা শেখার জন্য একজন শিক্ষক দাও।’ সবাই বলেছে, ‘যেসব বিষয়ে পরীক্ষায় খারাপ করেছে, সেগুলো পড়তে পাঠাও।’
তাই শিশুদের শুধু চিকিৎসক বা প্রকৌশলী বানানোর চেষ্টা না করে উদ্যোক্তা হওয়ারও সুযোগ দিতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের স্কুল-কলেজগুলো সবাইকে এটাই বোঝায় যে চিকিৎসক হতেই হবে, কিংবা প্রকৌশলী হতেই হবে। এতে আমরা অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে নিজেদের অজান্তেই হারিয়ে ফেলছি। এমন অনেকে হয়তো এই কক্ষের মধ্যেই আছেন, যাঁদের কোনো কিছু করার তীব্র ইচ্ছে আছে, দারুণ কোনো পরিকল্পনা আছে। আমরা তাঁদের স্বপ্নপূরণে সাহায্য করতে পারি।
একটি প্রাচীন প্রবাদ আছে, ‘তুমি যদি কাউকে একটি মাছ দাও, তাহলে তুমি তার এক দিনের খাবারের ব্যবস্থা করলে। কিন্তু তুমি যদি কাউকে মাছ ধরা শেখাও তাহলে তুমি তার সারা জীবনের খাবারের ব্যবস্থাই নিশ্চিত করে দিলে।’ অভিভাবক ও সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত শিশুদের হাতে মাছ তুলে না দিয়ে তা ধরতে শেখানো। আমরা যদি উদ্যোক্তা হওয়াকে একটি সম্ভাবনাময় জীবিকা হিসেবে মেনে নিয়ে ছেলেমেয়েদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ আর সহায়তা দিই, তাহলে সরকারকে আর কখনো বেকারসমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
আমরা সারা দিন বসে বসে শিশুদের জ্ঞান দিই, কী কী করা উচিত নয়। কাউকে মেরো না, কামড় দিয়ো না, তর্ক কোরো না, এমন আরও শত শত বিধি-নিষেধ! আমরা তাদের বলি, সবচেয়ে ভালো চাকরিটাই পেতে হবে। স্কুলের শিক্ষক বলেন, চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতে না পারলে আর জীবনে হলোটা কী! টেলিভিশন আর পত্রিকা তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, যদি একবার মডেল, গায়ক কিংবা নায়ক হতে পারো, তাহলে তোমাকে আর পায় কে! আমাদের এমবিএ প্রোগ্রামে কখনো উদ্যোক্তা হতে শেখানো হয় না। সেখানে শুধু শেখানো হয়, কীভাবে বড় বড় কোম্পানির হয়ে চাকরি করতে হবে। কিন্তু একবার কি কেউ ভেবে দেখেছে, এসব বড় কোম্পানি তৈরি করছে কারা? তারা সংখ্যায় হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ, তারা উদ্যোক্তা। আর এদিকে আমরা কেবলই তোতাপাখির মতো শিখিয়ে যাচ্ছি, ‘উদ্ভট কিছু করার চেষ্টাও কোরো না। সবাই যা করে, সেটাই করো। ভালো ছাত্র হও।’ কিন্তু দুঃখিত, ক্লাসে প্রথম হলেই যে কেউ সবকিছু পারবে, তেমন নয়। আমি জোর গলায় স্বীকার করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আমি অন্যদের দিয়ে আমার অ্যাসাইনমেন্ট করিয়ে নিতাম।
এখন সেই একই বিষয়ের বইয়ে আমার উদাহরণ দেওয়া আছে। সারা কানাডার শিক্ষার্থীরা তা পড়ছে। বইটি লেখার সময় তাঁরা যখন আমার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিলেন, আমি না বলে পারিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এই কোর্সে আমি কীভাবে পাস করেছিলাম!
উদ্যোক্তা হতে হলে এমবিএ করতেই হবে, স্কুলে ভালো ফল করতেই হবে—এমন কোনো কথা নেই।
আমরা কেন শিশুদের শেখাই না যে টাকাপয়সা যখন খুশি খরচ না করে কীভাবে জমিয়ে পরে ভালো কিছু করা যায়? আমি বড় রাস্তায় একবার একটা পয়সা ফেলে দেওয়ায় আমার বাবা আমাকে একা একা রাস্তার মাঝখানে গিয়ে সেটা তুলে আনার আদেশ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি খুব কষ্ট করে টাকা উপার্জন করি। আর তাই একটি পয়সাও নষ্ট হওয়া দেখতে চাই না।’ সেদিনের কথা আমি আজও ভুলিনি। হাতখরচ শিশুদের একটি বাজে ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তোলে। এটি তাদের ‘বেতন’ আশা করতে শেখায়। একজন উদ্যোক্তা কখনো নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতনের পেছনে ছোটেন না। আমার তিন ছেলেমেয়ে। আমি তাদের বলি বাড়িতে কোথাও কিছু ঠিকঠাক করা বা গোছানোর দরকার আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে। তারা আমাকে এসে জানায়। তারপর আমরা আলোচনা করে ঠিক করি, কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তাদের আমি কত পারিশ্রমিক দিতে পারি! হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে আমরা দর-কষাকষিও করি! কিন্তু এতে তাদেরই উপকার হয়। তারা চারপাশ থেকে সুযোগ খুঁজে নিতে শেখে, নিজের কাজ নিজেই করতে শেখে। এ ছাড়া কীভাবে কাজের যথাযথ দাম আদায় করতে হয়, তা-ও শিখে নেয়।
আমি বলব, শিশুদের ঘুমানোর সময় প্রতিদিন গল্প না শুনিয়ে সপ্তাহে তিন দিন অন্তত তাদের গল্প বলতে দেওয়া উচিত। তাদের জামাকাপড়, খেলনা কিংবা কম্পিউটার নিয়েই কিছু বলতে দিয়ে দেখুন না, সে কী গল্প বানায়! আমারসন্তানদের আমি এমনটি প্রায়ই করাই, এতে তারা সৃজনশীল হতে শেখে, নিজেদের মতো করে আনন্দও পায়। তাই শিশুদের কথা বলতে দিন, যা কিছু নিয়েই হোক না কেন। উদ্যোক্তা হতে হলে এসব দক্ষতা খুব প্রয়োজন।
আমরা নিজেদের জীবনে এগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়লেও আমাদের শিশুদের গড়ে তোলার বেলায় এগুলোর কথা ভুলে যাই, আমরা শুধু ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য প্রাইভেট টিচার দিয়েই মনে করি দায়িত্ব শেষ! কিন্তু না, তাদের নেতৃত্ব দিতে শেখাতে হবে। তাদের মনে মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে, আত্মনির্ভরশীল হতে জানতে হবে।''
সূত্র: ওয়েবসাইট
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার

সুকুমার রায়ের একগুচ্ছ মজার ছড়া

Print Friendly and PDF
আনন্দ


যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা ,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।


আড়ি

কিসে কিসে ভাব নেই ? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে-
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে ।

শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী !


আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনদিন্‌ সে ?
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয় ।


তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি ?
ছ্যাঁক্‌ ছ্যাঁক্‌ রাগ যেন খেতে আসে এখনি ।


তার চেয়ে বেশি আড়ি আমি পারি কহিতে-
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে ।



আয়রে আলো আয়

পুব গগনে রাত পোহাল,
ভোরের কোণে লাজুক আলো
         নয়ন মেলে চায় ।
আকাশতলে ঝলক জ্বলে,
মেঘের শিশু খেলার ছলে
         আলোক মাখে গায় ।।
সোনার আলো, রঙিন্‌ আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো-
         আয়রে আলো আয় ।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত ক'রে
         আলোর ঝরণায় ।।
ঘুম ভাঙান পাখির তানে
জাগ্‌রে আলো আকুল গানে
         আকূল নীলিমায় ।
আলসভরা আঁখির কোণে,
দুঃখ ভয়ে আঁধার মনে,
         আয়রে আলো আয় ।।

ছবি বানাও উৎসবে এসো

Print Friendly and PDF

www.naboprottoy.blogspot.comতানজিল রিমন:
আগামী বছরের ১৯ থেকে ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। ৬ষ্ঠ বারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করছে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি।

উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি থাকেছে শিশুদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা। ১৮ বছর বয়সের নিচে যে কোনো শিশু এ প্রতিযোগিতায় চলচ্চিত্র জমা দিতে পারবে। প্রদর্শনের জন্য শিশুতোষ ছবি জমা দিতে পারবেন বড়রাও।

ছবিগুলো জমা দিতে হবে ডিভিডি ফরম্যাটে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি, ২০/এ সেন্ট্রাল রোড (দোতলা), ঢাকা-এই ঠিকানায় চলচ্চিত্রের কপি পাঠাতে হবে।
আরও তথ্য জানতে ও আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে ভিজিট করো www.cfs-bangladesh.com

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কেমন আছে বিদেশে ?

Print Friendly and PDF
মুহম্মদ মাছুম বিল্লাহ: উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবন, পরিপাটি রাস্তাঘাট, নিরাপদ ও নিশ্চিত সামাজিক অবস্থা বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর তাই অজানার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ওপারে পাড়ি জমাচ্ছে। গ্রেট ব্রিটেন, সাইপ্রাস, ইটালি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, অস্ট্রিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যাচ্ছে। আসল উদ্দেশ্য যে শুধু পড়াশুনা তা নয়; জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, দেশের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে তারা ঐসব দেশে পাড়ি জমায়। আর ঐসব ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পাঠানোর নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে দেশে। দেশের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় (বেসরকারি) শিক্ষার্থীদের এক ধরনের টোপ দিয়েই ভর্তি করান যে, ক্রেডিট ট্রান্সফার করে শিক্ষার্থীরা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। তারা ছাত্রছাত্রীর পালস বুঝে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ইন্টারনেটের যখন খুব একটা প্রচলন আমাদের দেশে শুরু হয়নি, তখন বিদেশে ছাত্রছাত্রী পাঠানোর এজেন্সিগুলোর দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ছাত্রছাত্রীর বিদেশে চলে যেত। এখন ইন্টারনেটের সুবিধা থাকায় তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির খোঁজখবর নিয়ে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে ভর্তি হচ্ছে আর বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটে সব সময়ই খুব ভালো চিত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলা হয়। বিদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ধরনের সমস্যা আছে যেগুলো তারা ইন্টারনেটে দেয় না, আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা ঐসব বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ ভর্তি হয়ে প্রচুর সমস্যায় পড়ে। গ্রেট ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশের উপার্জনের একটি পথ হচ্ছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে দেওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানের খারাপ বা দুর্বল দিকগুলো কখনও ইন্টারনেটে দেওয়া হয় না বিধায় বিদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকৃত অবস্থা তারা বুঝতে পারে না। অনেকে গিয়ে তাই হাজার সমস্যার মুখোমুখি হয় ।
ব্রিটেনে টিআইইআর-৪ ভিসা পদ্ধতির অপব্যবহার করে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ব্রিটেনে চলে যায়। ২০০৯ সালে এটি চালু হয়। এসব ছাত্রছাত্রীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পাওয়ার কথা, আসলে তা পায় না। হালে যারা স্টুডেন্ট ভিসা পাচ্ছে, বিশেষত ডিগ্রি লেভেলের নিচে, তারা মাত্র ১০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পায়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই ডিগ্রি লেভেলে নিচের ভিসায় ব্রিটেনে যাচ্ছে, কাজ পাচ্ছে না। নতুন সেমিস্টারে ভর্তি হতে দুই হাজার পাঁচশত পাউন্ড জমা দিতে হয়। একটু ভালো কলেজ হলে তিন বা চার বা তারও বেশি ফি জমা দিতে হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীই এত টাকা জমা করতে পারে না বিধায় কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওখানে কাজ পেতে হলে যে ভাষাগত দক্ষতা থাকা দরকার, তা নেই অনেকেরই। ফলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্যত্র কাজ পায় না সহজে। সেসব স্টুডেন্ট ব্রিটেনে গিয়েছে, তাদের মধ্যে দশ শতাংশ ওখানকার পড়াশোনার উপযুক্ত। তারপরেও তারা যাচ্ছে। কোর্সের সাথে সামলাতে পারছে না। কোন প্রতিষ্ঠানে অবৈধ শ্রমিক খুঁজে পেলে সর্বোচ্চ দশ হাজার পাউন্ড জরিমানা দিতে হয় ঐ প্রতিষ্ঠানকে অতএব জেনেশুনে কোন প্রতিষ্ঠান এই রিস্ক নিতে রাজি হয় না, ফলে ভুয়া ছাত্ররা কিংবা ইংরেজিতে যারা কমিউনিকেট করতে পারে না, তারা কাজ পায় না ।
২০০৯ সালে ইউকে পয়েন্ট বেইজড সিস্টেমের (টিয়ার-৪) আওতায় মোট এক হাজার ৯৮৭টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল করেছে ব্রিটেন সরকার। এর মধ্যে ২০০ কলেজের মালিক বাংলাদেশী বংশদ্ভোত এবং পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে ছিল। ইউকে বোর্ডার ফোর্স গত বছরের মধ্যে জানুয়ারিতে বাংলাদেশি মালিকানায় ৬৮টি কলেজের স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল করেছে। মালিকরা এ নিয়ে শঙ্কিত (১৫ মার্চ, কালের কন্ঠ, ফারুক যোশী)। অনেক ছাত্রছাত্রী অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি,
জার্মানিতে পাড়ি জমাচ্ছে। অবৈধ পথে উন্নত বিশ্বে ঢুকতে গিয়ে অনেকের সলিল সমাধি ঘটেছে। তারপরেও থেমে নেই বিদেশে শিক্ষার্থীর যাওয়ার স্রোত।
জাপানে ভুয়া ছাত্রদের বলা হয ”উছো গাখছাই’। উছো গাখছাইদের খোঁজে জাপানি গোয়েন্দা পুলিশেরা বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে তল্লাশি চালায়। সনাক্ত করে এদের পরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। জাপানি পুলিশ যেহেতু একটু ভদ্র, তাই তারা ভুয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রথমে দেশে চলে যেতে অনুরোধ করে, না গেলে অ্যারেস্ট করে।
আমাদের দেশ থেকে যেসব ছাত্র বিভিন্ন দেশে যায় তারা স্বভাবতই দেশের স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়ে। অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে অনেক আদরে মানুষ হয়েছে, গোসল করার পরে কাপড়টিও নিজে ধোয় নি। এসব ছেলে-মেয়েরা বিদেশে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করে, গভীররাতে বাসায় ফিরে আবার রান্না করে। দেশে থেকে যদি এরা এর অর্ধেক পরিশ্রমও করত তা হলে দেশের চেহেরা অনেকটাই পাল্টে যেত। আমার জানামতে অনেক ছাত্র আছে যাদের ইতোমধ্যে ঢাকায় বাড়িঘর আছে, ব্যবসা আছে, তারা লন্ডনে গিয়েছে পড়তে। মাঝে মাঝে ফোন করে বলে, স্যার ফলের দোকানে কাজ করছি। অথচ এরা ঢাকায় থাকতে নিজে ফল কখনও কিনেও খায় নি, বাসার লোকজন যা কিনত, তাই খেত। লন্ডন নামের জায়গটি তাদের আকর্ষণ করে বলে সেখানে যায়। আমার এক সহকর্মীর একমাত্র ছেলে সাইপ্রাসে গিয়েছিল পড়তে, বছরখানেক পড়ে অজানা এক কারণে লাশ হয়ে দেশে ফিরছে। আজও কেউ জানতে পারে নি আসলে তার কী হয়েছিল।
আমাদের ছোট এই দেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভার যেন আর সইতে পারছে না। দেশও আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না উঠতি বয়সের বিদেশগামী এইসব যুবকদের দেশে রাখতে। একদিকে অবশ্য দেশের জন্য ভালো কারণ চাকুরির বাজারের ওপর চাপ কমছে। দ্বিতীয়ত, তারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্র পাঠাচ্ছে, কমবেশি যাই হোক। অতএব এসব ছাত্রছাত্রীর ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও সঠিক কিছু পদক্ষেপ এবং নীতিমালা তৈরি করা দরকার। শুধু এজেন্সিগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হওয়া উচিত। তবে রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা করতে গেলেই সেখানে দুর্নীতি আর অপদস্থতা এসে হাজির হয়, এ ব্যাপারটি গভীরভাবে দেখতে হবে সরকারকে। সর্বোপরি, আমাদের দেশের মিশনগুলোর উচিত দেশের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া। কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ছে তার খোঁজখবর নেওয়া, ঐসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলা এবং দেশকে সময় সময় আপটেড রাখা যাতে পরবর্তী সময়ে যারা যাচ্ছে তারা যাতে অন্ধকারে ঝাঁপ না দেয়। পার্টটাইম কাজের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলোর সাথেও কথা বলা উচিত। আমাদের বিদেশি মিশনগুলোর মনে রাখা উচিত, তারা দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বিদেশে মিশনে চাকরি করছেন, আর বিদেশে যারা কাজ করছেন বা পড়াশুনা করছেন তারা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখছে। বিদেশে শিক্ষা এবং কাজের বাজার আমাদের বাড়াতেই হবে, দেশের স্বার্থে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচী, 
ইমেইল: mmbillah2000@yahoo.com

নরওয়েতে উচ্চশিক্ষা

Print Friendly and PDF

Nabo Prottoyনোবেলের শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় নরওয়ে থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশটি ইউরোপ মহাদেশের স্ক্যান্ডেনেভিয়ার অন্যতম দেশ। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিগ্রি জগৎজোড়া। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রদানে নরওয়ের তালিকা মোটামুটি প্রথম দিকের। এখানে শিক্ষার্থীদের যেমন পড়াশোনায় টিউশন ফি নেই আবার পার্টটাইম কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার তালিকায় অনেকের কাছেই নরওয়ে অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও ইচ্ছে করলে নিতে পারেন নরওয়ের ডিগ্রি।


শিক্ষাব্যবস্থা
নরওয়ের পড়াশোনা মোটামুটি আমাদের দেশের মতোই। উচ্চশিক্ষার স্তর বিন্যাসে ব্যাচেলর মাস্টার্স পিএইচডি তথা সব ডিগ্রিই রয়েছে। এখানে ব্যাচেলর কোর্স বা ডিগ্রির মেয়াদ তিন-চার বছর। মাস্টার্স এক-দুই বছর এবং পিএইচডি তিন বছরের। এগুলোর পাশাপাশি এখানে রয়েছে কিছু নন-ডিগ্রি প্রোগ্রাম। এর মেয়াদ সাধারণত ১৫ দিন হতে এক বছর পর্যন্ত।

পড়াশোনার ভাষা
নরওয়ের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নরওয়েজিয়ান ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। এ জন্য যারা নরওয়ে যেতে চান তাদের নরওয়েজিয়ান ভাষা শিক্ষা করে যেতে হয়। তবে ইংরেজি ভাষায় আইইএলটিএসএ ৬+পেলেও হয়।

পড়ার বিষয়
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানের বিষয় থাকলেও মোটামুটি সব বিষয়েই পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে নরওয়েতে। অন্যতম কয়েকটি বিষয় হলো মেডিসিন, বায়োলজি, ফিজিক্স, ডেন্টিস্ট্রি, আর্টস, অ্যাডুকেশন, আইন, থিওলজি, সোস্যাল সায়েন্স, বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, নার্সিং, কম্পিউটার সায়েন্স, কমিউনিকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি।

পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচ
পড়াশোনার জন্য নরওয়েতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। তবে প্রথম দিকে রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ কিছু টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া থাকা খাওয়া বাবদ অর্থ খরচ করতে হয়। এখানে থাকা-খাওয়া, বই, চিকিৎসা যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচসহ একজন শিক্ষার্থীর ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

পার্টটাইম জব
প্রাকৃতিকভাবে নরওয়ে কিছুটা সমস্যাগ্রস্ত। নদী, পাহাড়, হিমবাহে ভরা দেশ, এখানে শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জবের ব্যবস্থা আছে। তবে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে নরওয়ের আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূল, ফলে এখানে কাজ করা কিছুটা কষ্টসাধ্য।

ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিং
নরওয়ের পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবতীয় তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করে চিঠি বা ই-মেইল করুন। তাদের তথ্যের আলোকে কাগজপত্র পাঠিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করুন। এখানে টঈঅঝ তথা ইউনিভার্সিটিস অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পাদন করে। এরপর ভর্তি হয়ে মনোয়নপত্র দেখিয়ে নরওয়ে দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করুন।

NORAD-স্কলারশিপ
Nowegian Agency for Development Co-operation (NORAD) প্রায় সব বিষয়ে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীকে দুই বছরের থাকা-খাওয়ার খরচসহ একটি রিটার্ন প্লেস টিকিট দেয়া হয়। প্রত্যেক বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হয়। ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারেন।
NORAD
Post, BOx-7800, N-5020
Berger, Norway
E-mail : siu@siu.no
website : www.siu.no

প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়
- University of Tromso
web : www.ub.ultono
- Berger University College
web : www.hib.no
- Oslo National College of Arts
web : www.khio.no
- Ostfold University College
web : www.hiof.no
সৌজন্যে: ক্যরিয়ার ইন্টেলিজেন্স

কানাডায় উচ্চশিক্ষা

Print Friendly and PDF

পড়ার বিষয়
এখানে বিজ্ঞান, আর্ট, বিজনেস যে কোনো বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায়। তবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়গুলো হলো- কম্পিউটার অ্যান্ড আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, ইতিহাস, কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং, মেডিসিন, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ভূগোল, ফুড সায়েন্স, ইতিহাস ইত্যাদি।

শিক্ষাব্যবস্থা
কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। এখানে বিভিন্ন কলেজের অধীনে এক বছরের যে কোনো সার্টিফিকেট কোর্স করা যায়। তাছাড়া যে কোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা করতে ১-২ বছর, অনার্স ৩-৪ বছর এবং মাস্টার্স করতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। এছাড়া থিসিসের উপর নির্ভর করে পিএইচডি করতে ৪-৭ বছর লাগে। আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু স্পেশাল প্রোগ্রাম অফার করে।

ভাষা ও যোগ্যতা
কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি দুই মাধ্যমেই পড়াশোনা করা যায়। তবে ইংরেজি ভাষা বেশি প্রচলিত। ভর্তির শুরুতেই ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন পরীক্ষা দেয়া লাগে। যেমন- অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL এর নাম্বার দেখে। এটি ১২০ নম্বরের একটি পরীক্ষা। যাতে নূন্যতম ৭৯ পেতে হয়। তবে ১০০’র বেশি নম্বর থাকা ভালো। এছাড়া বিজনেসের শিক্ষার্থীদের GMAT টেস্ট দেয়া লাগে। বাংলাদেশে ইটিএস সেন্টারে যোগাযোগ করে তাদের অধীনে এসব পরীক্ষা দিতে হয়। তার আগে অনলাইনে ইটিএস-এ রেজিস্ট্রেশন করে একাউন্ট খুলতে হয়। বিস্তারিত নিচের ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন-

http://www.mba.com/the-gmat.aspx
আবেদনের সময়
কানাডার অ্যাকাডেমিক বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয়। বছরে দু’টি সেমিস্টার থাকে। সেপ্টেম্বর অথবা জানুয়ারি সেমিস্টারে ভর্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আট মাস আগে শুরু করা ভালো।

পড়াশুনার খরচ
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় ভিত্তিক টিউশন ফি বিভিন্ন হলেও গড়ে যে কোনো বিষয়ে অনার্স করতে বছর প্রতি ৮ থেকে ২০ হাজার ডলার এবং মাস্টার্স করতে বছর প্রতি ৭ থেকে ১৫ হাজার ডলার লাগে। উল্লেখ্য, কানাডায় আইন, মেডিসিন ও এমবিএ পড়তে সাধারণত উচ্চ টিউশন ফি দিতে হয়।

পার্টটাইম জব
যারা সেখানে থিসিস করতে যান, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফান্ডের ব্যবস্থা থাকলে পার্টটাইম জবের প্রয়োজন পড়ে না। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসের বাইরে দু’ভাবেই পার্টটাইম জব করা যায়। ক্যাম্পাসের বাইরে জব করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করা যায়। বিস্তারিত নিচের ওয়াবসাইটে দেখতে পারেন-

থাকার খরচ
বিদেশে থাকার খরচ নিজস্ব লাইফ স্টাইলের উপর নির্ভর করে। তবে থাকা, খাওয়া, বই, বিনোদন, স্বাস্থ্য, রাষ্ট্রীয় ট্যাক্স, বিল ও যাবতীয় খরচ বাবদ মাসিক কমপক্ষে ৯শ’ ডলার লাগতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকলে খরচ অনেকটাই কম পড়ে। এছাড়া সেখানে স্থানীয় পরিবারের সাথেও থাকা যায়। এতে মাসে খরচ পড়বে ৪শ’ থেকে ৮শ’ বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন-

স্কলারশিপ
এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাকাডেমিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড ও স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। বিস্তারিত দেখতে পারেন-

এছাড়া, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়েও কানাডায় যাওয়া যায়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে তথ্য পেতে ভিজিট করতে পারেন-
আবেদন, ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিং
ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা শেষে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসে বা সরাসরি আপনার কাক্সিক্ষত বিষয়ের কোনো শিক্ষককের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখান থেকে আবেদন পত্র সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরীক্ষার ফলাফলসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে সেখান থেকে আপনাকে আহ্বান জানালে, কানাডা হাই-কমিশনে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। কানাডিয়ান হাই কমিশনের ঠিকানা-

High Commission of Canada
United Nations Road
Baridhara, Dhaka-1212
Bangladesh
Telephone: +880 2 988 7091 to 988 7097
Fax: +880 2 882 3043 & +880 2 882 6585
Email: dhaka@international.gc.ca
ভিসার জন্য-  http://www.vfs-canada.com.bd/
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফর্ম নেয়ার আগে কাক্সিক্ষত বিষয় অথবা রিসার্চের ক্ষেত্রে ফান্ডের বিষয়টি বিবেচনা করে বাছাই করা ভালো। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন। নিচে কিছু বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেয়া হলো-


 
Design by AbsCreation